দুটি বিনীত অনুরোধ!
দুটি বিনীত অনুরোধ!
আপনার ভাই, বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত, শুভাকাঙ্ক্ষী কেউ যদি ভালো ছবি আঁকে/তোলে, গান
গায়, সুর করে, লেখে, ভালো যন্ত্র বাজায়, অভিনয় করে বা শর্ট ফিল্ম বানায়- এনাদের দিয়ে
মাগনা মাগনা কাজ করানোর চিন্তা বাদ দিয়ে দেন। "টিএ-ডিএ দিবো /কার্টেসি মিল দেই
আমরা/ তোমার গানটা আমার নাটকে কাজে লাগালে লাইমলাইট পাবা/ আমাদের এখানে শো করে প্রচুর
হাইলাইট পাবা"- এসব ক্ষেত্রবিশেষ ছাড়া চরম লেভেলের ভাঁওতাবাজি। যোগ্যতা, প্রতিভা
আর পরিশ্রম ছাড়া কেউ-ই সুযোগ পায় না, কাউকে দেয় না। ফ্রি-তে সব পাইলে কদর করাটা ভুলে
যায় মানুষ।
যিনি অভিনয় করেন, তিনি দীর্ঘদিন অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের সেরাটা বের করার চেষ্টা করছেন।
যিনি গান করেন, তিনি ছোটবেলা থেকে সব ফেলে ওস্তাদজীর কাছে তালিম নিয়ে নিয়মমাফিক রেওয়াজ
করে গলা সেধে সাধনা করেছেন। যিনি ছবি আঁকেন তিনিও সাধনা করে শিখছেন, যিনি লিখছেন তিনিও
অনবরত নিজেকে ঝালাই করে যাচ্ছেন। এমনো হতে পারে, তারা যখন সাধনা করছেন, অন্যরা হয়ত
সে সময়টা বিনোদনের পেছনে সময় কাটাচ্ছে।
মস্তিষ্ক প্রসূত সৃষ্টি-শিল্প অমূল্য সম্পদ হলেও মূল্যহীন না। যথাযথ দাম দেয়া অসম্ভব
হলেও কদর করা অসম্ভব না। তাই যত "ছোটো" শিল্পী-ই হোক না কেন, অন্ততপক্ষে
খামে ভরে নূন্যতম সম্মানী দেবার চেষ্টা করবেন। এখন যদি বলেন, নূন্যতম সম্মানীর সংজ্ঞাটা
দেন! তাহলে বলবো নূন্যতম যে অর্থের আদান-প্রদান বা বিনিময়ে আপনার বা আপনার প্ল্যাটফর্মের
সম্মান, যোগ্যতা ও সামাজিক অবস্থান অন্যের কাছে নষ্ট হয় না, সেটাই আপনার জন্য শিল্পীর
নূন্যতম সম্মানী।
আর যেখানে-সেখানে দেখা হলেই, "এই গান শোনাও/ছবি আঁইকা দিও/তুইলা দাও" এপ্রকার
যেসব কথা বলেন তা স্নেহ-ভালোবাসা হিসেবে একজন শিল্পীর জন্য গর্বের। কিন্তু পরিবেশ ও
শিল্পীর মানসিক অবস্থা না বুঝে জোর করাটা যে নিন্মশ্রেণির আচরণ এটা আপনার জানা উচিত।
শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ তার বাবার লাশ নিয়ে যাবার সময়ে তৎকালীন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের
একটি ফেরিতে যখন উঠলেন, ফেরির যাত্রীদের অনুরোধ বারবার বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যানের পরেও
বাবার লাশ পাশে নিয়ে তাকে গান গাইতে হয়েছিল। এসব অত্যাচার কোনোভাবেই ভালোবাসা বা অনুরোধের
পর্যায়ে পড়ে না। শিল্পী তাই মানুষের বিনোদন ও ভালোবাসার জন্য যাচ্ছে-তাই করা লাগবে,
এসব বলে ভুলেও নরমালাইজ করার চেষ্টা করবেন না।
ভুললে চলবে না, শিল্পীর মনের এই ইচ্ছা/অনিচ্ছা-ই তার শিল্পকে রূপ দেয়, যা যে কেউ চাইলেই
পারে না। একে আপনি তাচ্ছিল্যভরে "হ্যাডম" বলতেই পারেন। শিল্পী কিশোর কুমার
এতো এতো রোমান্টিক গান গেয়ে উপমহাদেশ কাঁপিয়েছেন, অথচ ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন চরম
একাকীত্বে ভোগা বন্ধুহীন এক বিষণ্ণ মানুষ। যার যত ক্ষত তার শিল্প রূপায়নে রস তত। আবেগ-অনুভবের
এ ক্ষত'র কদর করার ক্ষমতা যে কারো থাকতে পারে কিন্তু কোনোভাবেই দাম দেবার নেই যোগ্যতা
আপনার-আমার কারো নাই।
তবে হ্যাঁ, কোনো শিল্পী চাইলে তার শিল্পকে উপহার বা দান করতে পারেন, তাতে সম্মানীর
প্রশ্নই আসে না। ব্যক্তিগতভাবে আমি উপহার ব্যতীত ফ্রি-ওয়ার্ক বা মাগনা কাজ করা অনেক
আগেই বন্ধ করে দিয়েছি। প্রিয় মানুষকে নিয়ে গান লেখা, সুর করা বা তার ছবি আঁকা এবং তাকে
তার সৃষ্টি উপহার দিতে-পেতে কমবেশ সবারই ভালো লাগে। এর মত নিঃস্বার্থ সুন্দর অনুভবের
তুলনা হয় না। দেওয়া-পাওয়ার এ অনুভব স্বয়ং বিধাতারও ভালো লাগে বিধায় এখনো পূজা/প্রার্থনার
প্রচলন আছে। বিধাতার সৃষ্টিতে কোনো না কোনো ফেরত পাবার ইচ্ছে বা কারণ দেখি, খুঁত পাই,
অথচ এদের ভালোবাসায়-সৃষ্টিতে অনেকসময় তাও খুঁজে পাই না। ব্যক্তি জীবনে খুব কম সংখ্যক
পেলেও ইনাদের আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি এবং আমৃত্যু ধরে রাখার চেষ্টা করি।
একবার শুনেছিলাম, দেশের কোনো এক শীর্ষস্থানীয় টিভি চ্যানেল মধ্যরাতে টকশো করার জন্য
জনৈক নামকরা বক্তা/শিল্পীকে ৬০০টাকা যখন দিচ্ছিলেন, শিল্পী সেটা সসম্মানে রেখে চলে
আসেন। আই রিপিট, যে চ্যানেল সেকেন্ড হিসেবে চলে এবং মিনিটে লাখ টাকা আয় করে সে চ্যানেল
৬০০ টাকা সম্মানী দিয়েছিল এবং সে "সম্মান" পেয়ে শিল্পী তা রেখে আসতে বাধ্য
হন। এখন আপনি যদি ভেবে বসেন,-
"যেই না শিল্পী, তার আবার সম্মানী! সমস্যা নাই। ডাকলে অভাব নাই। মাগনা কাজ করার
জন্য সিরিয়ালে বহুত লোকজন রাস্তায় পইরা আছে।"
তাহলে এরকম দুঃস্থ মানসিকতা নিয়ে এমুহূর্তে ফেসবুকে কথা আর না বাড়াই। শিল্পী আজম খান'কে
মৃত্যুর আগে অর্থের অভাবে বলতে হয়েছিল, "আমার সাহায্য লাগবে না। তোমরা আমার গানের
রয়্যালিটির টাকা দাও"। অথচ উনার মৃত্যুর পর একটি বিশেষ টেলিকম কোম্পানি ঠিকই আবেগমিশ্রিত
কন্ট্রিবিউট করে টিভিসি বানিয়েছিল। পুঁজিবাদীত্ব নিয়ে কিছু বলবো না এখানে, কিন্তু ইমোশনের
ফায়দা নিয়ে যার যা প্রাপ্য সেটা দিচ্ছেন না, তা তো মানা যায় না।
আবারো বলি, কোনো শিল্পকর্ম-ই মূল্যহীন বা ফ্রি অথবা মাগনা না। দেশ, শিল্প-সংস্কৃতি,
ইন্ডাস্ট্রি ও শিল্পীদের বেহাল দশা দেখে যে সিস্টেম ও মানসিকতাকে আফসোস বা গালিটা দেন
আপনারা, সেটার পরিবর্তন অনুগ্রহ করে নিজ থেকেই শুরু করেন, ছোট পরিসর থেকেই শুরু করেন।
বিলিভ মি অর নট, আপনার এ ছোট্ট আচরণ খুব বড় সুফল দিতে বেশি সময় নেবে না।
ART IS FREE BUT NOT FOR FREE!
ARTIST HAVE THEIR BILLS!
JUST LIKE YOU...
THANK YOU FOR UNDERSTANDING.
Comments
Post a Comment