সে এক কিশোরের গল্প - শুভ কর্মকার

শচীন দেব বর্মন তখন বলিউডের ব্যস্ত গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক। একটি ব্যক্তিগত কাজে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত অভিনেতা অশোকের কাছে গেলেন তিঁনি। দুজনার মধ্যে কথা হচ্ছিল বৈঠক কক্ষে। এমন সময় অন্দর মহল থেকে ভেসে আসল এক কিশোর কন্ঠে গাওয়া কুন্দন লাল সায়গলের গানের সুর। কন্ঠে আহামরি কোন শাস্ত্রীয় কাজের ছিটেফোঁটাটুকু নেই। কিন্তু দরদে ভরা কন্ঠ, বুকভরা মায়া দিয়ে গাইছে ছেলেটি। সেদিনই ছবিতে গান গাওয়ার জন্য রাজি করান তাকে। কিন্তু শর্ত একটাই তাকে গাইবার কায়দা পাল্টাতে হবে। ছেলেটি টেক্স মর্টন ও জিমি রজারের রেকর্ড শুনত নিয়মিত। শচীন কর্তার পরামর্শে খুব তাড়াতাড়ি আয়ত্ত্ব করে নেয় ইয়োডেলিং (yodeling)। গলাকে ভেঙে গান গাওয়ার এমন এক কায়দা উদ্ভাবন করে কিশোর সেই ছেলেটি যা সেই সময়ের বহুল প্রতাপশালী দুই গায়ক মহম্মদ রফি এবং মুকেশের থেকে ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। শুধু গায়ক হিসেবে নন, পরবর্তীতে একাধারে প্রযোজক, নির্দেশক, সুরকার, গীতিকার, অভিনেতা হিসেবেও লাভ করেন সমান জনপ্রিয়তা । 


ছেলেটির আসল নাম আভাস কুমার কাঞ্জিলাল গাঙ্গুলী । বিখ্যাত গাঙ্গুলী পরিবারে বাবা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলি ও মা গৌরি দেবীর ঘর আলো করে ১৯২৯ সালের ৪ আগস্ট মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়াতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চার ভাই বোনের ভিতর কিশোর সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন বলেই হয়ত স্বভাবে ছিলেন ডানপিটে। বড় ভাই অশোক ও অনুপ ছিলেন হিন্দি ও বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা। বড় ছেলে অশোক মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নাম করার পর গাঙ্গুলী পরিবার চলে যায় মুম্বাই। সেখানে গিয়ে বম্বে টকিজ়ে কোরাস গায়ক হিসেবে  ক্যারিয়ার শুরু করে ছেলেটি। ভাইদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই ছোটবেলা থেকে হতে চেয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু ছোটবেলায় বিখ্যাত গায়ক কুন্দন লাল সায়গলের গান মনে এমনভাবে দাগ কাটে যে অভিনয়ের চেয়ে সায়গলকে গুরু মেনে তাঁর গাওয়া গানগুলোতেই অনুরক্ত হয়ে পড়েন তিনি। দাদা অশোকের কল্যাণে কয়েকটি সিনেমাতেও গান গেয়ে ফেলেন। কিন্তু সত্যিকারের সফলতা এনে দিয়েছিলেন গায়ক-সংগীত পরিচালক শচীন দেব বর্মণ। কিশোর কুমার নাম নিয়ে সেই কিশোর ছেলেটি ভারতীয় বাংলা সংগীতে গেঁড়ে নেন আপন সাম্রাজ্য। পঞ্চাশের দশকে পুরো ভারতের মিউজিক ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রীতে ঝড় বইয়ে দেওয়া সেই কিশোরের জন্মদিন আজ।


শচীন দেব বর্মনের সাথে কিশোর কুমার
শচীন কর্তার পরামর্শে তাকে গাইবার কায়দা পাল্টাতে হয়েছিল। টেক্স মর্টন ও জিমি রজারের রেকর্ড শুনতেন তিনি। ইয়োডেলিং (yodeling) আয়ত্ত্ব করেন। তিনি গলাকে ভেঙে গান গাওয়ার এমন এক গাইবার কায়দা উদ্ভাবন করেন যা সেই সময়ের বহুল প্রতাপশালী দুই গায়ক মহম্মদ রফি এবং মুকেশের থেকে ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।

কিশোর কুমার যেমন গেয়েছেন হিন্দি সিনেমায় তেমনি আলোড়ন তুলেছেন বাংলা সিনেমায়ও। ‘আশা ছিল ভালবাসা ছিল’, ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, ‘এ আমার গুরুদক্ষিণা’, ‘আমার পূজার ফুল’, ‘একদিন পাখী উড়ে যাবে যে আকাশে’, ‘কারো কেউ নইকো আমি’ সহ অসংখ্য কালজয়ী গান তিনি গেয়েছেন। তাঁর গানের মাঝেই তিনি অমর হয়ে আছেন। তাঁর গাওয়া আরো কিছু কালজয়ী বাংলা গান যেমন : ‘আকাশ কেন ডাকে’, ‘সে যেন আমার পাশে আজো বসে আছে’, ‘সে তো এলো না’, ‘মোর স্বপনের সাথী তুমি কাছে এসো’, ‘হাওয়ায় মেঘ সরায়ে’, ‘সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা’, ‘আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো’, ‘তোমরা যতই আঘাত করো’, ‘ওগো নিরুপমা’, ‘তোমার পড়েছে মনে’, ‘ও পারে থাকবো আমি’, ‘তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে’, ‘পৃথিবী বদলে গেছে, ‘কি আশায় বাঁধি খেলাঘর’, ‘চোখের জলের হয়না কোন রঙ’, ‘এত কাছে দুজনে’, ‘এইযে নদী যায় সাগরে’, ‘আমি যে কে তোমার’, ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’, ‘আমারও তো গান ছিল’, ‘আধো আলো ছায়াতে’, ‘আমি দুঃখকে সুখে ভেবে বইতে পারি’ এমন অনেক জনপ্রিয় গান কান পাতলেই শোনা যায় এখনও। তাঁর প্রভাব এখনও এত বিশাল ও ব্যাপক যে বর্তমান কালের প্রতিষ্ঠিত অনেক গায়ক যেমন কুমার শানু, অভিজিৎ, বাবুল সুপ্রিয়, অমিত কুমার, শান, সুমিত কুমার প্রায় সকলেই তাঁদের ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে কিশোরের গানগুলোক অনুকরণ বা নকল করে গাইতেন। এখনো তাঁর গানের রিমেক এবং রিমিক্স বাজারে হটকেকের মত কাটতি করে বিক্রি হয়।



  বর্তমান কালের প্রতিষ্ঠিত অনেক গায়ক যেমন কুমার শানু, অভিজিৎ, বাবুল সুপ্রিয়, অমিত কুমার, শান, সুমিত কুমার প্রায় সকলেই তাঁদের ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে কিশোরের গানগুলোক অনুকরণ বা নকল করে গাইতেন। কিশোর কুমারের গানের রিমেক এবং রিমিক্স বাজারে হটকেকের মত কাটতি করে বিক্রি হয় এখনো।

লতাজীর সাথে কিশোর কুমার
বাংলা-হিন্দি ছাড়াও মারাঠি, অসমীয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি, মালায়লম, ওড়িয়া, এবং উর্দুতেও গান গেয়েছেন কিশোর কুমার । তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অ্যালবামেও বিভিন্ন ভাষায় গান করেছেন, বিশেষত তাঁর বাংলায় গাওয়া গানগুলি সর্বকালের ধ্রুপদী গান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। লতা মুঙ্গেশকরের অসম্ভব ভক্ত ছিলেন। তাঁর সম্মানে সব সময় পারিশ্রমিক নিতেন লতার চেয়ে ১ রুপি কম। পরবর্তীতে তাকে মধ্যপ্রদেশ সরকার কর্তৃক লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং হিন্দি চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তাঁর নামে কিশোর কুমার পুরস্কার চালু করা হয়।

লতা মুঙ্গেশকরের সম্মানে সব সময় পারিশ্রমিক নিতেন তাঁর চেয়ে ১ রুপি কম। পরবর্তীতে তাকে মধ্যপ্রদেশ সরকার কর্তৃক লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং হিন্দি চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তাঁর নামে কিশোর কুমার পুরস্কার চালু করা হয়।  



কমেডি চরিত্রে কিশোর কুমার
গায়ক হিসেবে প্রথম জীবনে সাফল্য পাওয়ার পর অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়ে উঠে তাঁর। নিজের স্বতন্ত্র গায়কীর পাশাপাশি অভিনয়েও সৃষ্টি করেন নিজস্ব অভিনয়ের কায়দা যা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছিল তাঁকে। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত কমেডি নায়ক হিসাবে জনপ্রিয় হন। তাঁর অভিনয়ে পাগলামির ছাপ ছিল স্পষ্ট, যা তিনি ইচ্ছা করেই তৈরি করেছিলেন। এমনকি খান্ডোয়ায় তাঁর বাড়ির সামনে নিজেই ‘মেন্টাল হসপিটাল’ লেখা সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন। রাজ কাপুর, দেব আনন্দ এবং দিলীপ কুমারের মত প্রবল জনপ্রিয় ও ক্ষমতাশালী নায়কদের ভিড়েও  কিশোর কুমার নিজের এক পৃথক জায়গা তৈরি করেছিলেন। হাসি খুশি ও ভাঁড়ামিতে মেতে থেকে কিংবা কমেডি নায়কের অভিনয় করলেও নিজের আত্মসম্মানের সাথে আপোষ করার মত লোক ছিলেন না তিনি। ৭০ দশকের মাঝামাঝি তাঁর প্রযোজনায় একটি ছবিতে তখনকার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয়ে অস্বীকৃতি জানালে অমিতাভ বচ্চনের জন্য গান না গাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কিশোর কুমার। যদিও পরে সব ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল শোনা যায়। তাঁর অভিনীত বিখ্যাত কমেডি চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘বাপ রে বাপ’, ‘চলতি কা নাম গাড়ি’, ‘হাফ টিকিট’, ‘পড়োশন’, ‘হাঙ্গামা’, ‘পেয়ার দিওয়ানা’, ‘বাড়তি কা নাম দাড়ি’ ইত্যাদি। ‘বাড়তি কা নাম দাড়ি’ সিনেমায় ভারতকে উপহার দিয়েছিলেন বাপ্পী লাহিড়ী নামে খ্যাত উনিশ বছরের আরেক কালজয়ী গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালককে। এছাড়া তাঁর অভিনীত অন্যান্য জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘নোকরি’, ‘বন্দী’, ‘দূর গগণ কি ছাঁও মে’, ‘দূর কা রাহি’ প্রভৃতি।


ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার পাওয়ার সময়
কিশোর কুমারের সংগীত জীবনে চরম সাফল্যের মাইলফলক ১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আরাধনা’ ছবিটি। এই সিনেমার নায়ক ছিলেন নবাগত রাজেশ খান্না। রাজেশ খান্নার জন্য এই সিনেমায় কিশোর তিনটি গান গেয়েছিলেন - ‘কোরা কাগজ থা ইয়ে মন মেরা’ লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে আর দুটি হোলো ‘রূপ তেরা মস্তানা’ এবং ‘মেরে সপনো কি রানী’। তিনটি গানই বিপুল জনপ্রিয়তা পায় এবং কিশোর কুমারের সঙ্গীতজীবনকে অনেক উপরে উঠিয়ে দেয়। এই সিনেমায় ‘রূপ তেরা মস্তানা’ গানের জন্য কিশোর প্রথম বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পান। শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসাবে ৮ বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন এবং একই বিভাগে সর্বাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড করেছেন।

১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আরাধনা’ ছবিতে প্লেব্যাকের জন্য প্রথম বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পান। শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসাবে ৮ বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন এবং একই বিভাগে সর্বাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড করেছেন।

পরবর্তী বছরগুলোতে কিশোর গায়ক হিসাবে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। সে সময়ে বলিউডে প্রতিষ্ঠিত সব নায়ক যেমন রাজেশ খান্না, শশী কাপুর, ধর্মেন্দ্র, রণধীর কাপুর, সঞ্জীবকুমার এবং দেব আনন্দের গলায় তিনি গান গান। এই সময়ে শচীন দেব বর্মণ এবং রাহুল দেব বর্মণের সুরে তিনি প্রচুর কালজয়ী গান গেয়েছেন। রাহুল দেব বর্মণের সুরে তিনি ‘বম্বে টু গোয়া’ সিনেমাতে প্রথমবারের জন্য অমিতাভ বচ্চনের জন্য গান করেন। ১৯৭৩ সালে অমিতাভের ‘অভিমান’ সিনেমার জন্য তাঁর গানগুলি সুপারহিট হয়। এরফলে পরবর্তী মেগাস্টার অমিতাভের নেপথ্য গায়ক হিসাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।



কিশোরের এই সাফল্যের পরে বলিউডের অন্য সুরকারেরাও তাঁকে নিজেদের প্রধান গায়ক হিসাবে বেছে নিতে বাধ্য করে। এদের মধ্যে প্রধান ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল জুটি। গীতিকার আনন্দ বক্সী সুরকার লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল এবং কিশোর কুমার জুটি বেশ কিছু রাজেশ খান্নার সিনেমার জন্য অনবদ্য সঙ্গীত উপহার দেন। যেমন- দাগ, রোটি, হাতি মেরে সাথি। লক্ষ্মীকান্ত, পেয়ারে লালের সুরেই কিশোর ও মোহাম্মদ রফি একসাথে গান করেন এবং কিশোর ও লতা মঙ্গেশকরের বেশ কিছু ভাল ডুয়েট গান তৈরি হয়। কিশোর কুমার এবং সুরকার কল্যাণজী-আনন্দজী জুটিও বেশ কিছু হিট গান উপহার দেন। যেমন- ধর্মাত্মা, লাওয়ারিস, কাবিলা, জনি মেরা নাম, ডন, কাগজ, সফর, মুকাদ্দর কা সিকান্দর প্রভৃতি সিনেমার গান। সত্তর এবং আশির দশক জুড়ে অব্যাহত থাকে কিশোরের জয়যাত্রা। নতুন অল্পবয়সী নায়ক যেমন ঋষি কাপুর এবং সঞ্জয় দত্তের জন্যও তিনি সফল গান উপহার দেন।

শচীন দেব বর্মন, শ্যামল মিত্র, বাপ্পী লাহিড়ী, লক্ষ্মীকান্ত, পেয়ারেলাল, আনন্দ বক্সী, কল্যাণজী, আনন্দজী, শংকর জয়কৃষানের মত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকের সাথে মিলে বলিউডের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে উপহার দিতে থাকেন একের পর এক সাফল্য। পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ কাঁপতে থাকে কিশোর কুমার জ্বরে।



আর.ডি বর্মনের সাথে কিশোর কুমার
শচীনদেব বর্মণের ছেলে রাহুলদেব বর্মণের সুরের জুটিতে তিনি সব থেকে বেশি হিট গান করেন। রাহুল এবং কিশোর জুটির কিছু অনবদ্য সিনেমার নাম হল- শোলে, ওয়ারেন্ট, হীরা পান্না, শরীফ বদমাশ, আঁধি, রকি, দ্য বার্নিং ট্রেন, আপকি কসম, আপনা দেশ, ধরম করম, টক্কর, সীতা আউর গীতা, জোশিলা, কসমে ভাদে, রামপুর কা লক্ষ্মণ, কালিয়া, গোলমাল প্রভৃতি। নতুন সুরকার যেমন রাজেশ রোশন এবং বাপী লাহিড়ী’র সুরেও তিনি বেশ কিছু হিট গান গেয়েছেন। রাজেশ রোশনের সুরে- দো অর দো পাঁচ, দুসর আদমি, মনপসন্দ, এবং বাপ্পী লাহিড়ী’র সুরে- নমক হালাল এবং শরাবী সিনেমার গান উল্লেখযোগ্য।  


সত্যজিৎ,  অমিত কুমার ও কিশোর কুমার

হিন্দির পাশাপাশি তিনি প্রচুর জনপ্রিয় বাংলা সিনেমাসহ বাংলা আধুনিক গানও গেয়েছেন। প্লেব্যাক করা বাংলা ছবির মধ্যে রয়েছে- রাজকুমারী, অমানুষ, আনন্দ আশ্রম, ওগো বধূ সুন্দরী, অমরকন্টক, আশ্রিতা, অনিন্দিতা, অমর সঙ্গী, কবিতা, গুরুদক্ষিণা, জীবন মরণ, জ্যোতি, তুমি কত সুন্দর, দোলন চম্পা, পাপ পুণ্য, বান্ধবী, মিলন তিথি, মোহনার দিকে, সঙ্কল্প, সুরের আকাশে ইত্যাদি। বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠিত নায়ক উত্তম কুমার, মিঠুন চক্রবর্তী, তাপস পাল, প্রসেঞ্জিতের গলায় তিনি গান গান। সঙ্গীত নির্ভর বাংলা হিট সিনেমা অমর সঙ্গী এবং গুরুদক্ষিণায় কিশোর কুমার প্লেব্যাক করেছিলেন বলেই দুই নায়ক যথাক্রমে প্রসেনজিৎ এবং তাপস পালের ক্যারিয়ারের সফল সূচনা হয়েছিল ।


নামের সাথে 'কুমার' শব্দটি থাকলেও একজন সংসারী ও বিবাহিত পুরুষ ছিলেন কিশোর কুমার। কর্মজীবনে সফলতা খুব তাড়াতাড়ি আসলেও বিবাহিত জীবন সুখ পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে এ মহান গায়কের। সংসার মনমত সাজাবেন বলে বিয়ে করেছিলেন চারবার। শেষ জীবনে ৪র্থ পক্ষ লীনা চন্দাভারকরই ছিলেন তাঁর সঙ্গী । কিশোরের প্রথম পুত্র (রুমা গুহ ঠাকুরতাঁর গর্ভে) অমিত কুমার একজন বিখ্যাত গায়ক। ২য় পক্ষ মধুবালা ছিলেন ভারতীয় বিখ্যাত অভিনেত্রী যিনি অকালেই মারা যান। ৩য় পক্ষ যোগিতা বালি কে পরে মিঠুন চক্রবর্তী বিবাহ করেন। কিশোরের ছোট ছেলে সুমিত কুমারও (লীনা চন্দাভারকরের গর্ভে) গায়ক।


কিশোর কুমারের বিবাহিত চারজন স্ত্রী

সারাক্ষণ হাসি খুশীতে মেতে থাকা জীবনযুদ্ধে জয়ী এই মহান শিল্পী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর ৫৮ বছর বয়সে অস্তাপাড়ে পাড়ি জমান। রেখে যান মোট ২,৭০৩টি গাওয়া গান (১১৮৮টি হিন্দি চলচ্চিত্রে, ১৫৬টি বাংলা এবং বাকি তেলেগু ও অন্যান্য ভাষায়) তাঁর অগণিত ভক্ত শ্রোতাদের জন্য ।

আজ এ মহান শিল্পীর ৮৮ তম জন্মদিনে জানাই পরম শ্রদ্ধা ।





Comments

Popular posts from this blog

সুরের ভেলার ভেসে চলা - সঙ্গীতের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ(ভারতীয় সঙ্গীত) : শুভ কর্মকার

আমার-আপনার বাঙালির রবি নজরুল... - শুভ কর্মকার