সর্বেষাং মঙ্গলং ভুয়াৎ

আরেকজনের ভালো থাকা দেখে, সুখে শান্তিতে ঘোরাঘুরি দেখে, সম্পর্ক দেখে, অর্জন দেখে, নাম হতে দেখে নিজের অজান্তেই যদি - "ও কেন এত ভালো থাকবে! সবাই এত ভালো আছে আমার কেন এত দুঃখ! ও কেন নাম করবে, আমি কেন করতে পারছি না! প্রতিদিন ফেসবুকে এত পোস্ট দেয়া লাগে কারো? এত 'My Day' দেয়া লাগে! উফ্ এত শো অফ ! সামান্য বেতনের চাকরি করে, খেতে পায় না, আবার উড়াউড়ি করে! এত তেল! এ ছেলে/মেয়েটা, খুব তাড়াতাড়ি উঠে যাচ্ছে,পড়ে যাবে! খুব লাফালাফি করছে, দেখা যাবে কী হয়!"- ইত্যাদি ইত্যাদি মনে হয় আপনার তবে অতিসত্বর চিকিৎসা নেওয়া উচিত। জীবনের চরম পর্যায়ের Depression, অনিশ্চয়তা ও অনিরাপত্তা জনিত শঙ্কাগুলো ধীরে ধীরে আপনাকে আত্মিক অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
একেকজনের ভালো থাকার পথ একেক ধরনের। কারো সাথে দ্বিমত থাকা আর কারো উন্নতি/ভালো থাকায় কারো তিক্ততা কোনভাবেই এক না। সোজা বাংলায় এ অনুভূতিকে ঈর্ষা বললেও দুটি অক্ষরের শব্দটির পরিনতি ভয়াবহ। শেক্সপিয়ারের ভাষায় এদেরকে বলা হয়, "green-eyed monster". সুন্দরকে নষ্ট করার অসম্ভব ভয়ংকর সুন্দর সব আইডিয়া green-eyed monster-দের মাথা থেকে আসে। নিজের ভালো থাকা নিজেই নষ্ট করেন নিজের অজান্তে। খারাপ থাকাটা তাই স্বভাবগত অধিকার। অদ্ভুত হচ্ছে, এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যখন গেঁড়ে বসতে বসতে একসময় কাছের মানুষের প্রতি ভীষণভাবে জন্মায় তাকে "Othello syndrome" বলে। যার ফলে ধীরে ধীরে মানুষটি আত্মহত্যা-প্রবণ হয়ে পড়ে।
সবারই সীমাবদ্ধতা আছে, সবাই তা পার করেই ভালোটা লুফে নেয়। মানুষ যখন থেকে অন্যের ভালো থাকা নিজের ভালোলাগা মনে করতে পারে, অন্যকে কদর(Appreciate) করতে শুরু করে, কৃতজ্ঞতা দেখায়, বিনয়ী হয়ে উঠে, তখন থেকে মনটা পরিষ্কার, হয়ে যায় হালকা! পৃথিবী লাগে বিশুদ্ধ জলের মত টলমলে সুন্দর। আর অজান্তেই ভেসে যায় ভালোর দিকে।
এই যে! এরকম অসুস্থ মানসিকতার কথা চিন্তা করে আমার সুন্দর জীবনটার কিছু সময় নষ্ট করে ফেললাম! অথচ বিশ্বাস করেন, মানুষগুলো হয়ত জানেই না এদের আশেপাশের মানুষজন এদের কত ভালোবাসে! 💚
সর্বেষাং মঙ্গলং ভুয়াৎ।

Comments

Popular posts from this blog

সুরের ভেলার ভেসে চলা - সঙ্গীতের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ(ভারতীয় সঙ্গীত) : শুভ কর্মকার

সে এক কিশোরের গল্প - শুভ কর্মকার

আমার-আপনার বাঙালির রবি নজরুল... - শুভ কর্মকার